অধ্যবসায়, সততা,শ্রম,সংকল্প যে কোন কাজের সফলতার চূড়ান্ত চাবিকাঠি -হাফিজা আক্তার
আমি হাফিজা আক্তার। গাজীপুর জেলার মেয়ে। জন্ম, বেড়ে উঠা, পড়াশোনা সবটাই গাজীপুরে। বাবা ব্যবসা করতেন। মা একজন গৃহিণী।
চার ভাইবোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। আমার মা বাবা দুজনেই খুব সৌখিন। আমার কাজের প্রথম এবং প্রধান অনুপ্রেরণা আমার মা। ছোটবেলায় মাকে দেখতাম একা হাতে সংসারের সব কাজ সামলে সন্ধায় আমাকে নিয়ে পড়াতে বসাতেন।
আর হাতে থাকতো সুই সুতা আর কাপড়। সংসারের টুকিটাকি সব কাজের জিনিস মা নিজের হাতে বানাতেন। আমি ছোট থেকেই একটু স্বাধীন চিন্তার মানুষ। মানুষকে মানুষ ভাবতেই ভালো লাগে।
খুব চঞ্চল ছিলাম। কেও আমার উপর কিছু চাপিয়ে দিতে পারতো না। সব সময় স্বপ্ন দেখতাম সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য কিছু করবো। মানুষের জন্য কিছু করার চিন্তা থেকেই আমার কিছু করতে হবে এই স্বপ্ন দেখা।
সবচেয়ে বড় কথা হলো বাবা, ভাই, স্বামীর পরিচয়ের বাইরে আমার নিজের একটা পরিচয় থাকবে। আমি ব্লক, বাটিক, টাই-ডাই নিয়ে কাজ করি। কাজের শুরু ২০১৬ এর শেষের দিকে।
আমি একটা প্রাইভেট স্কুলে জব করতাম। জবের পাশাপাশি ঘরে বসেই টুকটাক কাজ করতাম। তখন কাস্টমার ছিলো কলিগ, অাত্মীয়-স্বজন আর অভিভাবক।
কিন্তু ২০১৮ এর নভেম্বর টোটালি কাজ বন্ধ করে দিতে এবং চাকরিটাও ছেড়ে দিতে হয়। এক পর্যায় রুমে থেকে থেকে আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাই। তখন আমার কিছু বন্ধু _বান্ধব আমাকে কাজে ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক হেল্প করছে।
এখন আমি থার্ট পার্টির কাজ করি। মুলত শিবুরি ডাই করতে আমার ভালো লাগে। আমি শিবুরি নিয়ে বেশি কাজ করি। আমি অফলাইনে কাজ করি। খুব রিছেন্টলি Fiza’s Attire নামে একটা পেজ ওপেন করেছি।
আমার করা কাজের পাশাপাশি আরো কিছু এড করবো। আমার মা আমার কাজের অনুপ্রেরণা ঠিক কিন্তু আমার পরিবার যথেষ্ট কঞ্জারবেটিভ। তুমি সব কাজ শিখে রাখো কিন্তু ব্যবসা করা যাবেনা এই টাইপ।
আমি কখনো স্বপ্ন দেখা বাদ দেইনি। হাল ছাড়িনি। সুযোগের অপেক্ষায় থেকেছি। প্রতিবন্ধকতায় কাজটা হয়ত শুরু করতে একটু সময় লাগছে। কিন্তু শুরু করতে পেরেছি।
আমার স্বপ্ন এবং প্রবল ইচ্ছাই আজকে আমাকে এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে। আল্লাহ সহায় ছিলেন বলেই পেরেছি। এখন স্বপ্ন দেখি শুধু কিভাবে স্বপ্নের পথে হেটে আমার স্বপ্নগুলো সত্যি করতে পারবো।
মানুষের জন্য যেন কিছু করে যেতে পারি ভালো কাজের মাধ্যমে। যেন অন্তত একজন মানুষের সারাজীবন এর দায়িত্ব নিতে পারি। স্বপ্ন দেখি একদিন আমার ও একটা ব্র্যান্ড হবে।
ব্যবসার জন্য আমি কয়েকটি জিনিসকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছি। যেগুলো জানা খুব বেশি প্রয়োজন। যেমন: নতুন নতুন আইডিয়া। নতুন শুরু করতে জেয়ে অনেকে আইডিয়া সংকটে পরে যায়।
যে কোন কাজ করার আগে পরিকল্পনা থাকতে হয় নিখুঁত। এর সাথে বাজার, একি পন্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গুলির কি অবস্থা, ভোক্তাদের চাহিদা এসব বেপারে গবেষণা করতে হবে।
যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে হবে। পরিক্ষামুলক বাজার দেখতে হবে। আর্থিক পরিকল্পনা থাকাটা খুব জরুরী। মনে রাখতে হবে আয়ের চেয়ে যেন ব্যয় বেশি না হয়। নতুনদের জন্য বলবো ব্যবসার গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করুন।
পরিকল্পনা তৈরি করুন। অবশ্যই পরিবারের সহযোগিতা সাথে রাখুন। শুরুতেই খুব বেশি লাভের আশা করা যাবেনা। মুদ্রার দুই পিঠের চিত্রটাই মাথায় রাখতে হবে। অধ্যবসায়, সততা, শ্রম, সংকল্প যে কোন কাজের সফলতার চুড়ান্ত চাবিকাঠি।
নারী উদ্যোক্তার খোঁজে গ্রুপে জয়েন হয়ে আমি নিজেকে আবার নতুন করে আবিষ্কার করেছি। আগে অনেক কিছুই মনে হত এইটা মনে হয় পারবোনা, এইটা আমার দারা হবেনা।
এখন এই গ্রুপের সব আপুদের দেখে অনেক সাহস আসে নিজের মাঝে। বিশেষ করে উর্মী রহমান আপুর কথাগুলোতে শেখার অনেক কিছু আছে। এই গ্রুপটা কেমন যেন আমার সবকিছুর সাথে মিশে গেছে।
নারীদের জন্য এত সুন্দর একটা প্লাটফর্ম তৈরী করে দেয়ার জন্য উর্মী রহমান আপুকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সবসময় এই গ্রুপ এবং আপুর পরিবারের সবার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।